মেহেদী হাসান :মধ্যবিত্তদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা দিন আনে দিন খায়, অথবা যাদের নিজেদের একটা ব্যবসা আছে অথবা চাকরি করে। করোনার এই সংকটের সময়ে তাদের সকল প্রকার আয় বন্ধ। কিন্তু আয় বন্ধ হলে কি হবে, খরচ ঠিকই হচ্ছে তার গতিতে। বাজার খরচ, ঔষধের খরচ, বাসা-ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, এটা ওটা মিলিয়ে প্রতিনিয়ত খরচ তার গতিতে ঠিকই যাচ্ছে।
এই সময়ে বাংলাদেশের উচ্চবিত্তরা আল্লাহর রহমতে ভালোই আছে, কারণ তাদের কোন অভাব নেই। অন্যদিকে নিম্নবিত্তদের সাহায্য করার জন্য দেশে মানুষ এবং সংস্থারও অভাব নেই। সমস্যা হল এই মধ্যবিত্তদের নিয়ে। এদের সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না, আবার এরাও রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাহায্য নিবার পাত্র নয়।
এদের কাছে পেটের ক্ষুদার চেয়ে নিজের আত্মসম্মানটাই বড়। এরা না পারে ভিক্ষা করে খেতে আর না পারে অন্যের হক মেরে খেতে। ন্যায়-নীতি, সততা, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচা এই মধ্যবিত্তরা আজকে ভালো নেই। চিন্তায় এদের এখন মাথায় হাত। না পারছে বলতে, না পারছে সইতে। এমন অবস্থায় কি করবে, কি করা উচিত হবে ভেবে উঠতে পারছেনা এরা।
মাস শেষে এমনিতেই মধ্যবিত্তদের হাতে টাকা পয়সা থাকে না আর লক ডাউনের এই সময়ে আরো বাজে পরিস্থিতিতে আছে তারা। কিছু দিন পরই তাদের ঘরের খাবার শেষ হয়ে যাবে হয়তোবা কারোর শেষও। কিন্তু তাতে কি, এরা তো হাত পাতারও মানুষ না। আরো কিছু দিন ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচবে তবুও কারোর কাছে হাত পাতবে না। কিন্তু তারপর! তারপর আর কি, আল্লাহ ভালো জানেন।
এই মধ্যবিত্তরা চাইলেও ১/২ মাস উপার্জন না করে চলতে পারবেনা। আবার নিম্নবিত্ত বা গরীবদের মত অন্যের কাছে হাতও পাততে জানেনা। পারেনা লাইনে দাড়িয়ে কিছু আনতে। এই শ্রেণীটার লজ্জাবোধ সবসময়ই বেশি। নৈতিক মূলবোধ, আদর্শ কিংবা সামাজিক কারনে সবসময়ই নিজেদের গুটিয়ে রাখে এরা।
দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের গরীব অসহায় এবং বড়লোক সহ গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্যও প্রণোদনা ঘোষনা করেছেন। এসব উদ্যোগ অব্যশই প্রশংসনীয় বটে। কিন্তু মধ্যবিত্তরা? তাদের জন্য কি কিছু করা উচিত না! নাকি তারা এই সমাজের মানুষ না। হয়তো সময় বলে দিবে, কি হবে।
জনপ্রিয় লেখক হু’মায়ূন আহমেদ বলেছেন, “মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলোই ধরণীর আসল রূপ দেখতে পায়।” ঠিকই বলেছেন তিনি, পৃথিবীর এই শ্রেণীর মানুষ গুলোর কষ্ট একমাত্র ওই শ্রেণীর মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না। সমাজে এই মধ্যবিত্ত মানুষগুলো নীরবে, নির্ভিতে, নিঃশব্দে, নিরালাই রয়ে যাবে। কখনও কেউ জানবেনা, কেমন আছে তারা, কি খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা!!! ভালো থাকুক সকল মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো।