বিপ্লব আহমেদ,বিশেষ প্রতিনিধি : জীবনকে বাজী রেখে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনোলজিষ্ট বিভূতি ভূষণ হালদার নিজের জীবনের কথা না ভেবে করোনা রোগিদের পাশে এগিয়ে গেলেন। গত ২৯ মার্চ থেকে হাসপাতালে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কাজ শুরু হয়। ওইদিন থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন বিভূতি ভূষণ হালদার। গত ২৫ দিনে ১৭৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। বেশির ভাগ মানুষ যখন করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত। কেউ আক্রান্ত হলেই দূরে সরে যাচ্ছেন। তখন তিনি সে সব রোগিদের কাছে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন। জানা গেছে, বিভূতি যখন করোনা ইউনিটে রোগির নমুনা সংগ্রহ করতে যেতেন তার সহকর্মিরা তখন ভয়ে অন্যত্র চলে যেত। তিনি যে সাহসিকতা এবং কর্মদক্ষতার জ্বলন্ত প্রমাণ দিয়েছেন। তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এ রকম বিভূতিরাই পারে দেশ ও জাতিকে করোনার হাত থেকে প্রতিহত করতে। একজন ল্যাব টেকনোলজিষ্টের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে চিকিৎসক চিকিৎসা দেন। কিন্তু ওরা চাকুরীর শুরু থেকেই তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পেয়ে আসছে। দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার দাবি ওদের দীর্ঘদিনের। এছাড়াও ১০ বছর আগে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।
এমন প্রশ্নের জবাবে বিভূতিভূষণ বললেন, ‘হাসপাতাল থেকে পাঁচজনকে রোস্টার করে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। নমুনা সংগ্রহের কথা শুনে সহকর্মীদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। অনেকে অজুহাত দেখিয়ে দায়িত্ব এড়ালেন। অনেকে চেষ্টা- তদবির করে রোস্টার থেকে নাম কাটিয়ে নিলেন। বুঝলাম, শেষ পর্যন্ত কাজটা আমাকে একাই করতে হবে।’
বিভূতির সাহসিকতায় বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা তাকে ‘সত্যিকারের যোদ্ধা’ বলছেন আবার কেউ কেউ নায়ক যোদ্ধা বলেছেন।
২০১২ সালে গৌরনদীতে টেকনোলজিস্ট হিসাবে প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। চাকরির এক বছর পর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেকনোলজিস্ট পদে বদলী হন। দীর্ঘ আট বছর ধরে হাসপাতালে সুনাম ও দক্ষতার সহিত কাজ করে আসছেন, তার গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস বলেন, ‘বিভূতিভূষণের সাহসিকতা আমাদের গর্বিত করে। ওর জন্য সবসময় আমরা প্রার্থনা করি। ও যাতে সুস্থ থেকে কাজটা চালিয়ে যেতে পারে।’
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বাকির হোসেন বলেন, ‘যখন সবাই ভয়ে-আতঙ্কে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তখন বিভূতিভূষণ একাই এগিয়ে এসেছেন। দিন-রাত ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন। তাঁর মতো যুবকই আমাদের সত্যিকারের নায়ক। ভয় উপেক্ষা করে ছেলেটা যেভাবে কাজ করছে, এটা অভাবনীয়। ওর জন্য আমরা গর্বিত। গর্বিত শেবাচিম হাসপাতাল।