মাসুদ রানা /মেহেদী হাসান : করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সীমিত সংখ্যক পরীক্ষা, সীমিত আক্রান্ত দেখিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের খুশী করা এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের কৌশল নিয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
এই কৌশলের মাশুল বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদে দিতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ যদি পুরোপুরি ভাবে করোনা মুক্ত না হয় বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ মোকাবেলা করতে না পারে তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বে একঘরে হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলাফেরা দূর্বিষহ কঠিন হয়ে যেতে পারে। আসুন দেখে নেয়া যাক যদি বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলায় ব্যর্থ হয় বা করোনা দীর্ঘমেয়াদিভাবে বাংলাদেশে যদি অবস্থান করে তাহলে বাংলাদেশের কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে-
১.বিদেশে যাতায়াত বন্ধ থাকবে-
বাংলাদেশে যতদিন করোনার উপস্থিতি থাকবে, ততদিন আন্তর্জাতিক বিমানগুলো যে বাংলাদেশে আসবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত এবং বাংলাদেশের কোন বিমানকেও যে ঐ দেশগুলো অবতরণের অনুমতি দিবেনা সেটাও নিশ্চিত। এর ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সাথে একটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকবে। কারণ করোনার একটি বিষয় স্পষ্ট যে, অত্যন্ত ছোঁয়াচে হবার কারণে যে দেশেই করো’নার উপস্থিতি থাকবে, সেই দেশের সাথে অন্য দেশ যোগাযোগ বন্ধ রাখবেই। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশের প্রবেশ বন্ধ থাকবে যতদিন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ বাংলাদেশে সম্পূর্নভাবে বন্ধ না হবে।
২.অন্য দেশের লোকজন আসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করবে-
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের প্রায় সব মানুষ। বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি যদি ‘বিশ্বাসযোগ্যভাবে’ স্বাভাবিক না হয়, তাহলে তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে আসবেন না। বাংলাদেশে যদি তাঁরা দেরিতে আসেন তাহলে এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উপর প্রভাব পড়বে এবং বাংলাদেশ একটি একঘরে পরিস্থিতিতে পড়বে।
৩.অভিবাসনে ধ্বস নামবে-
ইতিমধ্যে করোনা পরিস্থিতির কারণে একটি বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে ফিরেছেন। বাস্তবতা হলো তাঁদের কারণেই বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। এখন বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এই সমস্ত অভিবাসীদের ঐ দেশগুলো নেবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কারণ করোনা ইউরোপ-আমেরিকাকে যেভাবে ভুগিয়েছে, তাতে তারা সতর্ক অনেক বেশি হবে। ফলে এই অভিবাসীদের জন্য তাঁদের কর্মস্থলে ফেরাটা দূরহ হয়ে পড়বে এবং এটা বাংলাদেশকে একঘরে করার ক্ষেত্রে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৪.পোশাকসহ রপ্তানীখাতের পণ্য নিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে-
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অভিবাসীদের পরে দ্বিতীয় ক্ষতিটা করেছে আমাদের গার্মেন্টস মালিকরা। তাঁরা বলেছে যে, বিদেশি বায়াররা চলে যাবে এবং বিদেশি বায়ারদের রাখার জন্যেই এই করোনার মাঝেও তাঁদের গার্মেন্টস খোলার মরিয়া চেষ্টা লক্ষণীয়। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে বাংলাদেশের খাদ্য, পোশাক বা অন্য কোন রপ্তানী পণ্য করোনামুক্ত দেশগুলো নেবে না এবং এই নিয়ে তাঁরা বাগড়া দিতে পারে। কারণ করোনা সংক্রমণ কিভাবে হয় এই নিয়ে নানারকম গুজব-গুঞ্জন রয়েছে, নানারকম মিথ্যা রয়েছে। কাজেই কেউ ঝুঁকি নিতে চাইবে না। ফলে করোনা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল না হলে যারা সবথেকে বেশি লাফালাফি করলো, সেই পোশাক খাত সহ রপ্তানীখাত সবথেকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এবং বিশ্বে বাজার হারানোর মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।
৫.বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রাপ্তির কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আস্থাহীনতা-
একটা সময় বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ছিল খুবই নেতিবাচক। বিশেষ করে বিএনপি-জামাতের আমলে। সেই সময় বলা হতো যে বাংলাদেশের তথ্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং এই বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের অনুপস্থিতির কারণে বাংলাদেশকে নেতিবাচকভাবে দেখা হতো। এখন বাংলাদেশে তথ্য আদান-প্রদান এবং অবাধ তথ্য প্রাপ্তির কারণে একটি বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। কিন্তু করোনাকালে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য না থাকলে বাংলাদেশের উপর আস্থাহীনতা তৈরি হবে, অবিশ্বাস তৈরি হবে ।
কাজেই করোনা শুধু জনস্বাস্থ্যের সমস্যা নয়, করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক, বিশ্বাসযোগ্য এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। যেন বিশ্বে বাংলাদেশের যে অবস্থান সেই অবস্থান আগের জায়গায় পুনঃস্থাপিত হয় এবং আমরা যদি করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে লুকোচুরি করি তাহলে বিশ্বে বাংলাদেশের একঘরে হয়ে যাওয়ার একটি সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।