শাকিব বিপ্লব।। বরিশাল শহরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরন জেলা প্রশাসনের ত্রানের চাল খাবার অযোগ্য হলেও অভুক্ত মানুষ উপায়হীন হয়ে নিরব থাকলেও রেশন কার্ড নিয়ে বিতরনে অনিয়মের অভিযোগে সামাজিক সংগঠন গুলো সবে সোচ্চার হয়েছে। তাদের অভিযোগ কার্ড বিতরনে দলীয়করনের আশ্রয় নেওয়ায় বিশেষ একটি গোষ্ঠী প্রাধান্য পাচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্রোহ করার শক্তি-সামর্থ্যহীন দরিদ্র শ্রেনীর একটি বৃহৎ অংশ। করোনা দুর্যোগে আপদকালীন সময়ে সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকে ওয়ার্ড ভিক্তিক ওএমএস অর্থাৎ খোলা বাজারে নির্ধারিত স্বল্পমূল্যে পণ্যসামগ্রী প্রাপ্তিতে এই কার্ড কাকে দেয়া যায় তা তদারকিতে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট একটি দপ্তর নিরব। সেই সুযোগে ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ডভিক্তিক নেতৃবৃন্দ তাদের পছন্দের ব্যাক্তি বা দলীয় অনুগতদের তালিকা করে ইতিমধ্যে এই কার্ড বিতরন শুরু করেছে। ফলে কেউ পাচ্ছে, কেউ বঞ্চিত হয়ে ক্রন্দনে “করোনা প্রতিরোধে বরিশাল” নামক একটি জোট জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপির মাধ্যমে এই অভিযোগ তুলে ধরেছে। এর মধ্য দিয়ে ৫ মে মঙ্গলবার অপরাহ্নে ৩৫ টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয় এই জোট রেশন কার্ড নিয়ে নয় ছয়ের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তুলল।
জান গেছে, নির্ধারন করা হয়েছে এই রেশন কার্ডের মাধ্যমে দশ টাকা দরের চালসহ-ডাল-তেল ও আরও কিছু পন্য এলাকা ভিক্তিক খাদ্য অধিদপ্তরের তত্বাবধানে বিতরন শূরু হতে যাচ্ছে। এর পূর্বে কারা এই কার্ড প্রাপ্তির যোগ্য তা বিবেচনায় চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবিসহ ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়। সরকারী কোনো দপ্তর মাঠ পর্যায়ে এই তথ্য সংগ্রহে নিজেরা¡ না থেকে ক্ষমতাসীন দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের কাছে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বভার দেয়।
খাদ্য নিয়ন্ত্রকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি সূত্রমতে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ১৮ হাজার কার্ড প্রদানে টার্গেট নেওয়া হয়েছে । কিন্তু এরই মধ্যে ৩০ টি ওয়ার্ডে এই রেশন কার্ড বিতরনে অনিয়মের এই অভিযোগ ওঠে। ইত্যমধ্যে কার্ড বিতরন কার্যক্রম গত দুদিন ধরে শুরু হওয়ার পর এই কেউ পাচ্ছে আবার কেউ বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় সকাল থেকে ইফতারীর পূর্বমুহ‚র্ত পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের একটি বিশেষ স্থান নির্ধারন করে সেখান থেকে এই কার্ড বিতরন করা হচ্ছে। এই খবরে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠী সহ মধ্যবিত্তরাও কার্ড প্রাপ্তির প্রত্যাশায় প্রখর রৌদ্র ও বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
মাইকিং করে কার্ড প্রাপ্তদের তাদের মোবাইল নম্বর ধরে ডাকা হচ্ছে। খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তালিকা নিয়ে কার্ড দিচ্ছে, পাশে দাঁড়িয়ে থাকছে ওয়ার্ড আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবর্গ। এরাই কার্ডের তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সপ্তাহখানেক পূর্বে পৌঁছে দিয়েছিলো বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে । কিন্তু অধিকাংশ ওয়ার্ডে এই বঞ্চিতদের কান্নার শব্দ পাওয়া যায় এই দুর্যোগে কাজবিহীন বেঁচে থাকার চিন্তায়। সুশীল সমাজের দুয়ার পর্যন্ত এই বঞ্চনার খবর পৌঁছালে তাদের বিবেক তাড়িত করে। বিষয়টি আমলে আনে বর্তমান দুর্যোগকালীন মাঠে থাকা “করোনা প্রতিরোধে বরিশাল” নামক একটি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
সুশীল সমাজের অংশীদার এধরনের ৩৫টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বয় গড়ে ওঠা জোট এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে নিশ্চিত হয় দলীয়করন বা একটি মহল কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা কথা বলার সাহস নেয়না এধরনের ব্যাক্তিরাই বঞ্চিতর তালিকায় রয়েছে, এমনটি দেখা যায়। টাকা দেবে কিন্তু একটু সুবিধা বাজারদরের থেকে স্বল্পমূল্যে পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এই প্রবঞ্চনার প্রতিবাদে সম্মিলিত ওই জোট নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই অভিযোগ জানাতে উপস্থিত হয়, দেয় স্মারকলিপি।
প্রশাসনিক একটি সূত্র জানায়, এই অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা প্রশাসনের মধ্যে কিছুটা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিষয়টির সাথে ক্ষমতাসীন মহল জড়িত থাকায় তারা বিষয়টি নিয়ে এমন একটি পর্যায়ে অবস্থান নিয়েছে, “সাপ মারবে কিন্তু লাঠি যেনো না ভাঙ্গে” সেই কৌশলী পথ অবলম্বন করতে চায়। এই কৌশল নেওয়ার একটি কারনও খুঁজে পাওয়া গেছে।
সূত্রটি বলছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ পর্য›ত যে ত্রান দেওয়া হয়েছ া অপেক্ষা নগর আ.লীগের সাধারন সম্পাদক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি কর্পোরেশনের ত্রাণ তহবিল থেকে দেয়া খাদ্যর পরিমান দ্বিগুনেরও বেশী। এবং তাদের চালের মান জেলা প্রশাসকের ত্রানের চাল অপেক্ষা উন্নত। ধারনা করা হচ্ছে, সরকারী নিম্নমানের চাল বিতরন করে দরিদ্র গোষ্ঠীর সাথে একধরনের প্রতারনা করা হয়েছে। এখন রেশন কার্ড নিয়ে জেলা প্রশাসন বাড়াবাড়ি করলে প্রতারনার বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে, এমন আশঙ্কায় ভুগছে জেলা প্রশাসন।
রেশন কার্ড নিয়ে নয় ছয় প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক অজিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিডিয়াকে আশ্বস্ত করেন, অভিযোগ প্রপ্তির কথা স্মারকলিপির মাধ্যমে অবহিত হয়েছেন মাত্র। এখন খতিয়ে দেখবেন। তার ভাষায় ও এম এসের কার্ড দলীয়করনের সুযোগ নেই। অনিয়মের প্রমাণ মিললে কার্ড বাতিল করাও হবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি কার্ড বাতিলের উদাহরন তুলে ধরেন। তবে কেহ বঞ্চিত হলে তাদের কার্ড প্রাপ্তির নিশ্চয়তা রয়েছে।
এদিকে বরিশাল খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক ও ওএমএস কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন দুর্নীতির বা অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ইতিমধ্যে ২‘শ টি অভিযোগ তাদের দপ্তরে পৌছেছে। ৩০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০ টি এলাকায় কার্ড নয়ে দলীয়করন হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট কমিটি সেগুলো যাচাই বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।