খায়রুল আলম রফিক,অতিথি প্রতিবেদক : সতেরশ’ সাতান্ন সালে পলাশীর যুদ্ধে সেনাপতি মীরজাফরের চক্রান্তে পরাজিত হয়েছিলেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। আটক করা করা হয় নবাবকে । পিপাসার্ত নবাব একটু পানি চেয়েছিলেন মীরজাফরের পুত্র মীরানের কাছে । পান করতে না দিয়ে মীরান সিরাজের মাথায় একঘড়া পানি ঢেলে দিয়েছিল ।
কক্সবাজারে সিনিয়র সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা কক্সবাজারের এসপি ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসের ক্রসফায়ার বাণিজ্য ও নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় রোষানলে পড়েন । এক পর্যায়ে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় অস্ত্র, মাদকসহ ৬টি মামলা । ফরিদুলকে আটক করে চালানো হয় মধ্যযুগীয় অকথ্য নির্যাতন ও বর্বরতা । নির্দয় ওসি প্রদীপের প্রহারে ক্লান্ত ও পিপাসার্ত হয়ে পড়েন ফরিদুল । পানি পানি বলে চিৎকার করলে, ওসি তাকে টয়লেটের নোংরা পানি দিয়েছিল পান করার জন্য । অভিযোগ করে বলেন, ফরিদুলের ছোট বোন সালমা মোস্তফা । কারাগার থেকে আদালতে সোপর্দ করার দিন এমনটি করেন ওসি । বড় ভাই ফরিদুল মোস্তফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে বিষয়টি তাকে জানান ।
জানা যায়, মিথ্যা মামলার বোঝা নিয়ে দীর্ঘ এগার মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। আর অসহায়ভাবে খেয়ে না খেয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন তার তিন সন্তান, স্ত্রী ও অবিবাহিত দুই বোনসহ বৃদ্ধ মা।
ঢাকার মিরপুর থানা, কক্সবাজার মডেল থানা ও টেকনাফ থানার পুলিশকে ব্যবহার করে ফরিদুল মোস্তফার ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও বর্বরতা চালায় ওসি প্রদীপ কুমার দাস।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ‘টেকনাফ থানায় টাকা না পেলে ক্রসফায়ার দিচ্ছে ওসি প্রদীপ’- শিরোনামে ফরিদুল মোস্তফার সম্পাদিত স্থানীয় দৈনিক ‘কক্সবাজার বাণী’র অনলাইন ভার্সনে এবং ‘জনতারবাণী’ শিরোনামের অনলাইন নিইজ পোর্টালে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়। এরপরই তিনি প্রদীপের রোষানলে পড়েন। পরে টেকনাফ থানার নিজের লোককে বাদী করে ওসি প্রদীপ কুমার দাসের পরিকল্পনা মতে তারর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা করেন। এরপর থেকেই পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে পালিয়ে বেড়ান। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করলেও শেষরক্ষা হয়নি। ঢাকা মিরপুরের একটি বাড়িতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। প্রদীপ মিরপুর থানার পুলিশকে ব্যবহার করে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে টেকনাফে নিয়ে যান।ফরিদকে টেকনাফ নিয়ে যাওয়ার পর চলে অকথ্য নির্যাতন ও বর্বরা। তার চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায় কুঁড়েঘরে অভিযানের নামে নাটক সাজিয়ে উদ্ধার করা হয় ইয়াবা, অস্ত্র ও বিদেশি মদের বোতল। পুলিশ বাদী হয়ে করে পৃথক তিনটি মামলা। পাঠানো হয় জেলে। এরপর থেকে তিনি কারাগারে। তার বিরুদ্ধে সংবাদ করলেই নির্যাতন করত এই ওসি। ওসি প্রদীপের ক্ষোভের শিকার হয়ে ১১ মাস ধরে ৬টি মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে কক্সবাজার কারাগারে আছেন তিনি । তার চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নির্যাতন করা হয়। পাশাপাশি পায়খানার রাস্তায় দেয়া হয় মরিচ ও গরম পানি। প্লাস দিয়ে উপড়ে নেয়া হয় দুই হাতের সব নখ। ভেঙে দেয়া হয় হাত-পা ও আঙুলের জয়েন্ট। এযেন মধ্যযুগীয় নির্যাতন ।