মাসুদ রানা, উলানিয়া থেকে ফিরে : বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী ধানের শীষ প্রার্থীকে কুমিরের মুখে ছেড়ে দিয়ে নৌকায় স্থানীয় বিএনপির নেতারা নৌকায় উঠতে শুরু করেছে । পাশাপাশি সাধারণ কর্মিদেরকেও চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার প্রচারনা চালানোর। সেই সাথে আ’লীগ ঘরনার সতন্ত্র প্রার্থী রুমা সরদার ও নৌকা মার্কার প্রার্থী মিলনের বেঘোরে পাল্টাপাল্টি হামলা মামলায় উত্তাপ্ত সন্ত্রাসের জনপদ উলানিয়ায় ধানের শীষ প্রার্থী মোশারেফ হোসেন মশুর পক্ষে শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
বলাই বাহুল্য, প্রতিপক্ষ আ’লীগ কিংবা যেকোন দল’র প্রার্থীরা প্রতিযোগিতার লড়ায়ে জয়ী হতে যে কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে উলানিয়া বিএনপির নেতা কর্মিরা কেন নৌকার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের অনুসন্ধানে জানা গেছে সেখানকার ভিলেজ পলিটিক্স’র নানান তথ্য। আগামী ১০ ডিসেম্বর উলানিয়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে লড়াই করবেন আব্দুল হালিম চৌধুরী মিলন। তিনি একসময়কার বিএনপির শীর্ষ নেতা শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসেনের হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী মো:সেলিম ওরফে আব্দুলের বাড়িতে হামলা করেছিলেন। মিলনের বাবা আব্দুল হাই হিরু চৌধুরী উলানিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি। তাঁর মেজো ভাই মিটন চৌধুরী উলানিয়া ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। সেজো ভাই রিপন চৌধুরী উলানিয়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। ছোট ভাই লিখন চৌধুরী উলানিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তাই আপন বড় ভাই মিলনকে জয়ী করতে নিজ দলকে জলাঞ্জলি দিয়ে মিটন-লিখন-রিপন তিন ভাই উলানিয়া বিএনপির নেতা কর্মিদের নিয়ে নৌকার পক্ষে স্লোগান দিচ্ছে। পাশাপাশি নৌকর পক্ষে ভোট নিশ্চিত করতে সিঙ্গেল মোশনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকায় ভোট চাচ্ছে। সেইসাথে মেহেন্দিগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পদক গিয়াস উদ্দিন ও সাংগঠনি সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুক্তা একাট্ট্রা হয়ে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েছেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদের সাথে। জেলার শীর্ষ এই নেতা উলানিয়া ইউনিয়ন বিএপির প্রার্থী নির্ধারন করায় থানা বিএনপির গিয়াস উদ্দিন ও মুক্তাসহ বৃহৎ একটি অংশ ধানের শীর্ষ প্রার্থীর বিরোধীতায় নেমেছেন। অন্তরালে বিএনপির থানা কমিটিও নৌকার পক্ষে সমর্থন যোগাচ্ছেন। দলীয় অভ্যন্তরীণ নানান জটিলতার সমীরণের সামনে ধানের শীষ প্রার্থী মোশারেফ হোসেন’র পক্ষে বা তাকে জয়ী করতে বিএনপির পক্ষ থেকে কোন সমন্বয় কমিটি করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে উলানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও প্রায়াত ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ সরদারের স্ত্রী রুমা সরদার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে থেকে আনারস মার্কা নিয়ে লড়াই করছেন। তাকে ভেতরে ভেতরে স্থানীয় সাংসদ পঙ্গজ দেবনাথসহ তৃনমূল আ’লীগের একটি অংশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন । উলানিয়ার এই ত্রিভূজ কোনের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে কোনঠাসা হয়ে ধানের শীষ প্রার্থী মোশরেফ হোসেন সাধারণ কিছু কর্মিদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট ভিক্ষা চাইছেন। এদিকে শক্তিমত্তার লড়ায়ে নৌকা প্রার্থী ও সতন্ত্র প্রার্থী কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এই দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি ক্ষমতার দাপটে এ নিয়ে দুইবার পুলিশসহ অন্তত ৫০জন আহত হয়েছেন। ফলে নির্বাচনের ১সপ্তাহ আগ থেকেই সাধারন ভোটার ও সমার্থকরা ভীতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তাই দলীয় নেতাদের অ-পরাজনীতি ও সতন্ত্র নৌকার দাপটে অস্থির নির্বাচনী মাঠে
বিএনপি তৃনমূল সমর্থকরা ভোটের বিষয়ে নাক গলাতে চাইছেন না। তবে সংবাদকর্মিদের কাছে তারা বলেছেন,আমাদের ধানের শীষ প্রর্থীকে কুমিরের মুখে ছেড়ে দিয়ে নৌকায় উঠছে বিএনপির নেতারা। তাই সধারণ কর্মিরা কোন পথে যাবেন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির হাই কমান্ডের কাছে। এ বিষয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম লাবু জানান,নৌকা প্রার্থীর আপন তিন ভাই ইউনিয়ন বিএনপির নেতা। তাই সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়গুলোর সমাধান করবেন দলের শীর্ষ নেতারা। বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সাংসদ মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন,আমিও জেনেছি উলানিয়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির অনেক নেতারা নৌকার পক্ষে কাজ করছে এবং এটা সত্য। আমাদের দলীয় প্রার্থী যদি লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন তাহলে আমরা দল থেকে এসব মীরজাফরদের বহিস্কার করার সুপারিশ পাঠাবো কেন্দ্রিয় নেতাদের কাছে।