জহির খান উজিরপুর (বরিশাল): সারাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু অব্যাহতভাবে বেড়েই চলছে। ক্রমাবনতিশীল এই ভাইরাস গত ১৫দিনে দেশের ৩১টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেসব জেলাকে সংক্রমনে ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে থাকা বরিশাল জেলা শহর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার পশ্চিমের উজিরপুর উপজেলায় গত ১৩ দিনে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কসপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ জন নারী ও সাত জন পুরুষসহ উপজেলার মোট ১২ জন প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের বয়স ৪০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। এসব আক্রান্তরা সকলেই নিজ নিজ বাড়িয়ে অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু তারপরেও প্রাণঘাতি এই ভাইরাস নিয়ে উজিরপুরের মানুষের মধ্যে নেই কোনো সচেতনতা। স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে জনসমাগমের ওপর নানা বিধিনিষেধ থাকলেও এখানে চরমভাবে তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ উপজেলার পৌর সদর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারগুলো সকাল থেকে গভীর রাত অবধি হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার উপস্থিতিতে জমজমাট থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা মুখে মাস্ক পরার বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষিত। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ি স্থানীয় প্রশাসন সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ঘোষণা করে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রায়ই মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানাও করা হচ্ছে। এরপরেও এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার কিংবা সামাজিক দূরত্ব মানার কোন বালাই নেই। এছাড়া উপজেলার সরকারি-বেসরকারি অফিস, হাট-বাজার, বিপণিবিতান, মার্কেট, আঞ্চলিক রুটে চলাচলকারি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা-ইজিবাইক, মাহিন্দ্রাসহ সকল গণপরিবহন, লঞ্চ-ট্রলার এবং খাবার হোটেলগুলোতে কোথাও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। এ যেন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। মানুষের এমন খামখেয়ালিপনায় স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। শনিবার (৩ মার্চ) সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মাস্ক পরছেন না শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষ। কেউ কেউ থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখছেন। কোথাও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি, ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মাহিদ্রা চলাচল করছে। একইদিন দুপুরে পৌর সদরের উজিরপুর বাজার, ইচলাদি বাসস্ট্যান্ড বাজার, ডাকবাংলো মোড় ও কালিরবাজারসহ জনবহুল স্থানগুলোতে দেখা যায়, সামাজিক দূরত্ব না মেনে সবজি ও মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়। বেশিরভাগ দোকানদার কিংবা কর্মচারির মুখে মাস্ক নেই এবং ক্রেতারাও মাস্ক ছাড়াই গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছেন। বাজারের মাছের দোকানগুলোতে এর থেকেও ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। চায়ের দোকানগুলোতে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রায় সকল বয়সের লোকজন মাস্ক ছাড়াই আড্ডায় ব্যস্ত রয়েছেন। খোদ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার অফিসের উল্টোপাশে মোল্লা হোটেল ও মোল্লা হোটেল-২ এবং উজিরপুর বাজারের ঢালী হোটেলসহ প্রায় সকল স্থানের হোটেলগুলোর চিত্র দেখে করোনাভাইরাস নামে ভয়াবহ কোনো সংক্রমণ ব্যাধি আছে তা বোঝা দায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ভর্তি থাকা ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মুখে নেই মাস্ক। সেই সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই চোখে পড়ে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে প্রায় সব জায়গাতেই ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ লেখা কাগজ সাটানো থাকলেও কেউই তা মানছেন না। অনেক রোগীরা নাক-মুখ না ঢেকে থুতনি বা কানের সঙ্গে মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছে। এ সময় মাস্কবিহীন একাধিক রোগীর সাথে কথা বলা হলে তারা সকলেই করোনা ভয়াবহ ও মরণঘাতি ভাইরাস জানিয়ে নিজেরা অনেক সচেতন তা তুলে ধরতে চেষ্টা করেন। কিন্তু মাস্ক কেন ব্যবহার করছেন না এবং সামাজিক দুরত্ব মানছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রত্যেকে নানান অজুহাত দেখান। এ সম্পর্কে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার মো. শামসুদ্দোহা তৌহিদ জানিয়েছেন, ‘হাসপাতালে আগত কিংবা ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনদের মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোরভাবে বলা হলেও কেউ মানছেন। অনেকে এনিয়ে প্রায়ই চিকিৎসক ও সেবিকাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।’ তিনি আরও জানান, ‘করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে। তবে মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এ সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে। তাই স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হয়ে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করার জন্য জোরালো দাবি জানান এই চিকিৎসক।’ এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা প্রণতি বিশ্বাস বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অবশ্যই সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সরকাররের নির্দেশানুযায়ী বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারের জন্য কার্যকর ভ‚মিকা নেওয়া হচ্ছে। এছড়া এই সংক্রমণ ব্যাধির ভয়াবহতা তুলে ধরে প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা ও মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। সেই সাথে বিভিন্নভাবে সচেতনমূলক প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে।’
আইন-আদালত, বরিশাল বিভাগ, লিড নিউজ