চলমান শুদ্ধি অভিযানের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় ‘সন্দেহ’ দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
নেতাদের ভাষ্যানুযায়ী, চলমান শুদ্ধি অভিযান সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই জানেন। এখানে রাজনৈতিক কোনো নেতা বা সরকারের কোনো মন্ত্রীর সম্পৃক্ততা নেই। তবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার অনুযায়ী, দুর্নীতিবিরোধী জিরো টলারেন্স দেখানোর কথা এ অভিযানে। সে অনুযায়ী রাঘববোয়াল ধরার জন্য অভিযান পরিচালনা করার কথা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘স্পা ব্যবসা কারা করে, বিলিয়ার্ড কারা খেলে, ছোটখাটো জুয়া কারা খেলে, ছোটখাটো বারে কারা যায়- তাদের গ্রেফতার করার মতো অভিযান হওয়ার কথা নয়। এ অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো, রাঘববোয়াল ধরা। সেটা না হলে এ অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত চলমান শুদ্ধি অভিযানে দুর্নীতিগ্রস্ত, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজি কাজে যুক্ত মন্ত্রী-এমপিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাবেক যুবলীগ নেতা ও এবার মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়া এক এমপি, মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া কয়েকজন এমপি ও একাধিকবার ক্ষমতায় আসা এমপিরা।
জানা গেছে, এসব মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়ে বেশ কয়েকবার দলীয় ফোরামে ইঙ্গিত করে শুধরাতে বলেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু কোনো কাজ না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন দলীয়প্রধান। শুধু নিজ দলের এমপি-মন্ত্রী নন, অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদে রয়েছেন এমন দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী এমনকি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিভিন্ন গ্রুপিং করা নেতাদের তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে অভিযান পরিচালিত হবে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া র্যাবের হাতে আটক হন। পরে অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। অভিযানের ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে আটক করে র্যাব। এ সময় বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদকদ্রব্য ছাড়াও নগদ এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) করার নথি জব্দ করা হয়।
এছাড়া শুক্রবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজের কাছে সাত প্যাকেট গন্ধহীন হলুদ রঙের ইয়াবাসহ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ক্যাসিনোতে খেলার কয়েন, স্কোরবোর্ড ও ৫৭২ প্যাকেট তাস। র্যাবের ধারণা, ক্লাবটিতে ক্যাসিনো খেলা হতো।
একই রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ক্লাবেও অভিযান চালানো হয়। তবে ক্লাবটি বন্ধ থাকায় সেখানে থাকা বারটি সিলগালা করে দেন র্যাব সদস্যরা।